রোদেল ঝলমলে একটি সুন্দর বিকেলে বাড়ির নিচের মাঠে খেলতে এসেছে ছোট্ট শিশুরা। কিছুক্ষণ পর বিকালের নাস্তার জন্য ডাক পড়লে বেশ অনীহা নিয়েই বাড়ি ফিরলো তারা এবং শিশুদের অধিকাংশই নাস্তা না করেই মাঠে ফিরে এলো। আর যারাও বা নাস্তা করেছে তারাও সম্পূর্ণটুকু শেষ করেনি। প্রায় একই চিত্র দেশের প্রতিটি পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রেই। শিশুদের খাবারের প্রতি অনীহা নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তার আর অভিযোগের যেন কোন শেষ নেই।
তবে দুশ্চিন্তা বা অভিযোগের আগে, তার শিশুটি কেন খেতে চাইছে না সে বিষয়টি মায়েদের ভেবে দেখতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের খাদ্যে অনীহার কারণটি তাদের দিকে ভালোভাবে নজর দিলেই বোঝা সম্ভব। ছোটখাট শারিরীক অসুস্থতা, মানসিক কোন সমস্যা, দৈনন্দিন একই রকম খাদ্যতালিকার প্রতি একঘেয়েমি চলে আসা, অতিরিক্ত মাত্রায় জাঙ্ক ফুড গ্রহণ, শিশুর খাবারটি তার অনুপযুক্ত ইত্যাদি কারণে শিশুদের খাদ্যের প্রতি অনীহা চলে আসে। আর অপর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে তাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়, যার প্রভাব পড়ে শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে।
অ্যাসিডিটি, অতিরিক্ত রোদে খেলা-ধুলার কারণে মাথা ব্যাথা, বাইরের খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটে ব্যাথা, ঋতু পরিবর্তনের কারণে হালকা জ্বর, বমি বমি ভাব ইত্যাদি শারিরীক সমস্যাগুলো আলাদা আলাদা ভাবে শিশুদের মাঝে দেখা দিতে পারে যেগুলো প্রায়ই শিশুরা উপলদ্ধি করতে পারে না বলে মায়েদের জানায় না। তবে ভিতরে ঠিকই অস্বস্তি বোধ হতে থাকে। অনেক সময় স্কুলে বা খেলার মাঠে বন্ধুদের সাথে মতের অমিল, শিক্ষকদের বকুনি, অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ এসব কারণেও মানসিক ভাবে তাদের উপর চাপ পড়তে পারে। শারীরিক বা মানসিকভাবে কোন সমস্যা হলে প্রায় সময়ই তাদের ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া রোজ রোজ একই ধাঁচের খাবার খেতেও শিশুদের মাঝে একঘেয়েমি চলে আসে যার ফলে তারা খাদ্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অনেক সময় শিশুর খাবারটি অতিরিক্ত ঝাল হলে, তেল-মসলাযুক্ত হলে বা একদম স্বাদহীন হলে শিশুরা সেসব খাবার খেতে চায় না। এছাড়াও চিপস, কার্বনেটেড ড্রিংকস, ফাস্ট ফুড ইত্যাদির প্রতি অতিরিক্ত ঝুকে যাওয়ার ফলে বাসায় তৈরী খাবারের প্রতি তাদের অনাগ্রহ চলে আসতে পারে। এসব বিষয়গুলোর প্রতি বাবা-মা ভালোভাবে নজর দিলে শিশুদের খাবারের প্রতি অনীহা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে সমস্যাগুলো জেনে তা সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
নতুন যে কোন কিছুর প্রতি শিশুদের আগ্রহ বরাবরই বেশি। তাই তাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত নতুন ধরনের খাবার সম্পৃক্ত করতে পারলে তাদের আগ্রহ ফিরে আসবে। তবে এসব খাবার এমনভাবে তৈরী করতে হবে যেন সেগুলো থেকে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। শিশুদেরকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাক-সবজি, ফল-মূল এসব গতানুগতিক ধারায় না দিয়ে বাসায় তৈরী পুডিং, মিল্কশেক, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস জিঙ্ক ও আয়োডিনসহ ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং নির্দিষ্ট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ পানীয়, দুধ, শাক-সবজি ও মাছ-মাংসের তৈরী কোফতা, কাবাব, স্যান্ডুইচ, সালাদ ইত্যাদি তৈরী করে দিলে শিশুরা আগ্রহ নিয়ে সেগুলো খাবে। এতে করে বাইরের জাঙ্ক ফুডের প্রতিও তাদের আগ্রহ কমে আসবে।
শিশুর মানসিক ও শারিরীক বিকাশের জন্য বাড়ন্ত বয়সটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেসময়ে শিশুর সঠিক পুষ্টি সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। এসময়ে খাবারে অনীহার কারণে শিশুর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি যেন না হয়। কেননা একটি সুস্থ-সবল শিশুই গড়তে পারে আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত।